চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আলঝেইমার রোগটির সম্পর্কে আমাদের ধারনা খুবই কম। তাই সচেতনতা বাড়াতে আমার এই লেখাটি-
১৯০৬ সালে জার্মান মনোচিকিৎসক অ্যালয়েস আলঝেইমার প্রথম এ রোগটির বর্ণনা দেন। আর সে কারণে তার নাম অনুসারে এ রোগটির নাম রাখা হয় আলঝেইমার।
সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের বেশি লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হয়। আবার অনেকের বয়স ৪০ পার হওয়ার সাথে সাথে এই রোগে আক্রান্ত হয়। স্মৃতিভ্রংশের সাধারণ রূপই হলো- আলঝেইমার।প্রতি বছর ৫০ লক্ষ আমেরিকান এই রোগে আক্রান্ত হয়। গবেষকেরা ধারনা করছেন ২০৫০ সালে এই সংখ্যা দ্বিগুন হবে। ২০১৫ সালে এশিয়া মহাদেশে ২৩ লক্ষ আলঝেইমার রোগী শনাক্ত করা হয়েছে এবং ২০৫০ সালে এই সংখ্যা দ্বিগুন হবে।
আলঝেইমার রোগের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা এখনও সম্ভব হয় নি। তবে গবেষণায় দেখা যায় যে, এটি মষ্তিস্কের প্লাক ও টেঙ্গুল(যা হাইড্রোফসফোরাইলেটেড টাউ প্রোটিনের সমষ্টি) সংশ্লিষ্ট রোগ।
এই রোগে আক্রান্তের মস্তিষ্কে তিনটি উপাদানের অস্বাভাবিক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছেঃ
অ্যামাইলয়েড প্লাকনিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল (টাউ প্রোটিন দিয়ে গঠিত এক ধরনের আঁশ জাতীয় )অ্যাসিটাইলকোলিন
এই রোগের মূল ঘটনার শুরু হয় যখন অ্যামাইলয়েড বিটা নামক একধরনের প্রোটিন উৎপাদনের মাধমে যা পরবর্তীতে মস্তিষ্কের রক্তকণিকার ভেতরে স্তুপ পাকিয়ে অ্যামাইলয়েড প্লাক গঠন করে। এই অ্যামাইলয়েড প্লাকই নিউরনের মৃত্যুর কারন এর ফলে মস্তিষ্কের নিউরনগুলো পুনরায় সৃষ্টি হয় না এইকারনে মস্তিষ্কের তথ্যগুলো এক নিউরন থেকে আরেক নিউরনে যেতে পারে না।
Aß42 (৪২ আমিনো এসিড সমৃদ্ধ আমাইলয়েড বিটা) আঠালো প্রকৃতির যা মস্তিষ্কের রক্তনালিকার ভেতরে দলা পাকিয়ে অ্যামাইলয়েড প্লাক গঠন করে।
আলঝেইমার রোগে আক্রান্তের স্নায়ুকোষের টাউ প্রোটিনের গাঠনিক পরিবর্তন ঘটে এবং এটি গিট পাকিয়ে যায়। তখন একে নিউরোফাইব্রিলারী টেঙ্গুল বলে। এমতাবস্থায় নিউরনে সক্রিয় অণুনালিকার পরিমাণ কমতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে নিউরনের মৃত্যু ঘটে।
মস্তিষ্কের কর্টেক্সে ও সম্মুখ ভাগে বৃহদাকার পিরামিড আকৃতির অ্যাসিটাইলকোলিন নিউরন থাকে যা আসিটাইলকোলিন ক্ষরণের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তায় গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আসিটাইলকোলিন নিউরনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অণুনালিকা থাকে।
আলঝেইমার রোগে টাউ প্রোটিনের গাঠনিক পরিবর্তনের কারণে এই আসিটাইলকোলিন নিউরনে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় । সাথে সাথে বুদ্ধিমত্তা , অণুধাবনের ক্ষমতা ও হ্রাস পায়। গবেষকেরা নতুন অবিষ্কৃত ভ্যাক্সিন এর মাধ্যমে দেখেছেন যে এটি আমাদের ব্রেনের Aß42 ক্যামিকেল এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে যার ফলে মস্তিষ্কের নিউরনের মধ্যে ক্ষতিকর প্লেগ গুলো মারা যায় আর এরজন্য রক্তনালীর মধ্যে অ্যামাইলয়েড প্লাক জমা বা দলা বাধতে পারে না।
গবেষকেরা ইদুর, খরগোশ ও বানর এর উপর পৃথক পৃথক ভাবে পরীক্ষা করেছেন। ইদুরের শরীরে এই ভ্যাক্সিন দেয়ার পর ফলাফলে দেখা গেছে যে, ৪০% বিটা আমালয়েড ও ৫০% টাউ প্রোটিন এর পরিমান কমে গেছে যা আলঝেইমার রোগের জন্য প্রধান কারন। ইদুরের ক্ষেত্রে আরো পরিলক্ষিত হয় যে, তাদের ইমিনিউ সিস্টেম এর কোন ব্যাঘাত ঘটে নি এবং ব্রেনে ও কোন ইনফ্লামেশন ঘটে নি। শীঘ্রই তা হিউম্যান ট্রায়াল এ আনা হবে বলেও জানিয়েছেন গবেষকে।
আলঝেইমার এর লক্ষনঃ
১. কাজ করতে করতে হঠ্যাত ভুলে যাওয়া।
২. একটা জায়গায় যাওয়ার পর মনে করতে না পারা কেন এই জায়গায় আসা হলো।
৩. মন মানসিকতার পরিবর্তন
৪. পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
৫. খাওয়া দাওয়ার ইচ্ছা না থাকাসহ ইত্যাদি।
১. কাজ করতে করতে হঠ্যাত ভুলে যাওয়া।
২. একটা জায়গায় যাওয়ার পর মনে করতে না পারা কেন এই জায়গায় আসা হলো।
৩. মন মানসিকতার পরিবর্তন
৪. পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
৫. খাওয়া দাওয়ার ইচ্ছা না থাকাসহ ইত্যাদি।
গবেষকেরা আলঝেইমার এর প্রকৃত কারন এখনো উদ্ভাবন করতে পারেন নি তবে ধারনা করছেন যে, ৫-১০% বংশগত কারনে হতে পারে। আলঝেইমার রোগের প্রতিকারের জন্য গবেষকেরা নিয়মিত ঘুম ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাওয়ার খাওয়ার ও পরামর্শ দিয়েছেন।
তথ্যসূত্রঃ নিউইয়র্ক টাইমস,
উইকিপিডিয়া।
Sei
ReplyDelete