প্রথম জাস্টিনিয়ানের নাম অনুসারে এই রোগের নামকরন হয় 'জাস্টিনিয়ান প্লেগ'। ৫৪১-৫৪২ খ্রিস্টাব্দে বাইজেস্টাইন সভ্যতায় এটি ছিলো পৃথিবীর প্রথম মহামারি। সম্রাট জাস্টিনিয়ান ও এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং ব্যাপক চিকিৎসার ফলে সুস্থ হয়ে উঠলেও এই রোগের নাম হয়ে যায় সম্রাটের নামানুসারে 'জাস্টিয়ান প্লেগ'। মিসরে প্রথম এই রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে ফিলিস্তিন ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি। পরে পুরো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এই প্লেগ তাণ্ডব চালায়। এই রোগ পরবর্তী আরও দুই শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সময়ে মহামারি আকার নিয়েছিল। মারা গিয়েছিল প্রায় ৫ কোটি মানুষ। তখনকার হিসাবে এটি ছিল পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ। এই প্লেগের মূল বাহক ছিল 'ইঁদুর'। মূলত মানুষের চলাচলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে।
লন্ডনের গ্রেট প্লেগ (১৬৬৫):
ইতিহাসবিদদের মতে, মহামারী প্লেগ চৌদ্দ শতাব্দীতে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু ১৬৬৫ সালে লন্ডনের গ্রেট প্লেগের জন্য এটি লন্ডনে দ্বিতীয়বারের মতো প্রকাশিত হয়েছিল, যার কারনে লন্ডনের জনসংখ্যার ২০% মানুষ মারা যায়। মৃতের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে গণকবর দিতে হয়েছিল এবং হাজার হাজার বিড়াল এবং কুকুর, যাদের উৎসের কারণ বলে মনে করা হত, তাদের হত্যা করা হয়েছিল। প্রাথমিক ধারনা করা হয় মৃতের সংখ্যা ছিলো ২ লক্ষ। মহামারিটি শেষ পর্যন্ত ১৬৬৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
স্প্যানিশ ফ্লু (১৯১৮):
সিডিসি (CDC) অনুসারে, স্প্যানিশ ফ্লু ছিল একটি ইনফ্লুয়েঞ্জাভাইরাস জনিত মহামারী। যা ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি H1N1 টাইপ ভাইরাস ছিলো। ধারনা করা হয়, আভিয়ান (পাখি) থেকে স্প্যানিশ ফ্লু এর উৎস ছিল। যদিও ভাইরাসটির উদ্ভব সঠিক কোথায় তা এখনও অস্পষ্ট। সিডিসির অনুমান করে যে, প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ (যা বিশ্বের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ) (১মিলিয়ন= ১০ লক্ষ) ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিল।ধারনা করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬,৭৫,০০০ মানুষ মৃত্যুবরন করে। বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৫০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় স্প্যানিশ ফ্লুয়ের কারনে।সিডিসি অনুসারে, ১৯১৮ সালের ফ্লু বিশেষত ভাইরাল ছিল। স্প্যানিশ ফ্লু সম্পর্কে সিডিসি বলেছিলো যে, স্প্যানিশ ফ্লুয়ের এফেক্ট ছিল দ্রুত এবং ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি। ১৯১৮ সালে মহামারী ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিরা ফুসফুসে পানি জমাসহ এবং তীব্র নিউমোনিয়া এবং ফুসফুসের ইনফেকশানের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। সিডিসির মতে, বিজ্ঞানীরা ২০০৫ সালের শুরুতে, ফ্লু ভাইরাসটির প্রতিলিপি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। ভাইরাস রোগজনিত এবং হোস্টকে ক্ষতি করার ক্ষমতাকে মূল্যায়নের জন্য একদল বিজ্ঞানী দেখিয়েছিলেন যে, ১৯১৮ এর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসটি একটি "প্রকৃতির বিবর্তন এবং মানুষের জিনের সাথে একত্রিত হয়ে, এক মারাত্মক ভাইরাস ছিল"।
![]() |
এশিয়ান ফ্লু (১৯৫৭):
সিডিসি জানিয়েছে, আরেকটি ফ্লু মহামারী হলো, "এশিয়ান ফ্লু"। ১৯৫৭ সালে পূর্ব এশিয়ায় শুরু হয়েছিল। এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসটি H2N2 স্ট্রেন/টাইপ ছিল, যা প্রথম ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে সনাক্ত হয়েছিল। সেখান থেকে, ভাইরাসটি ১৯৫৭ সালের এপ্রিলে হংকংয়ে এবং ওই সালের গ্রীষ্মে আমেরিকার উপকূলীয় শহরগুলিতে চলে আসে। বিশ্বব্যাপী 'এশিয়ান ফ্লু' ১.১ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল, যাদের মধ্যে ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিল। বিজ্ঞানীরা বলেন যে, ১৯৫৭ সালের এশিয়ান ফ্লু মহামারীটি "অ্যান্টিজেনিক শিফট" নামক একটি ছোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৯৬৮ সালের মহামারীর জন্ম দিয়েছে। ফ্লু ভাইরাসের জিনে সামান্য পরিবর্তন হয়েছিলো, যা একটি ভাইরাস H (হেম্যাগ্লুটিনিন) এবং N (নিউউরামিনিডেস) এর পৃষ্ঠতলের প্রোটিনগুলিতে পরিবর্তন আনে, যা শরীরের প্রতিরোধক প্রতিক্রিয়াটিকে উত্তেজিত করে। ভাইরাসের প্রতিবছর এই অ্যান্টিজেনিক পরিবর্তনের কারনে, সিডিসি জানিয়েছেন, একজন মানুষ একাধিকবার এই 'ফ্লু ' তে আক্রান্ত হতে পারে। এইজন্য সিডিসি বলেছে, প্রতিবছর সুস্থ থাকতে হলে 'ফ্লু ভ্যাকসিন'( ফ্লু শর্ট) প্রয়োজন।
(চলবে)
তথ্যসূত্রঃ CDC, উইকিপিডিয়া, হিস্টোরী.কম
wow. মহামারি আর মহামারি
ReplyDelete